অর্থসহ মুনাজাতের তিনটি আয়াত (পাঠ ১০)

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা - কুরআন ও হাদিস শিক্ষা | NCTB BOOK
121

পৃথিবীতে চলার জন্য আমাদের নানা জিনিসের প্রয়োজন। এসব জিনিস পাওয়ার জন্য আমরা বহু কষ্ট করি। আল্লাহ তায়ালার দয়া ব্যতীত কোনো কিছুই আমরা লাভ করতে পারি না। মহান আল্লাহ আমাদের রব। তিনিই সবকিছু আমাদের দান করেন। দুনিয়া-আখিরাতের সমস্ত নিয়ামত আল্লাহ তায়ালারই দান। সুতরাং কোনো কিছু পাওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকটই প্রার্থনা করা উচিত। আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রার্থনাকেই মুনাজাত বলা হয়। আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং আমাদের মুনাজাত করার জন্য শিক্ষা দিয়েছেন। আল-কুরআনে মুনাজাতমূলক বহু আয়াত রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র তিনটি আয়াত নিম্নে উল্লেখ করা হলো। আমরা এসব আয়াত শিখব ও অর্থ জানব। এরপর এগুলোর মাধ্যমে মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করব।

আয়াত ১

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

অর্থ: "হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়াতে এবং আখিরাতে কল্যাণ দাও। আর আমাদের আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা কর।" (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২০১)

দুনিয়ার জীবনই মানুষের শেষ নয়। এরপর রয়েছে আখিরাত। আখিরাত হলো চিরস্থায়ী। এর শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। এ দুটি জীবনে কল্যাণ লাভ করাই হলো প্রকৃত সফলতা। দুনিয়ার জীবনে আমরা সুখ-শান্তি চাই। আর আখিরাতে চাই মুক্তি ও সফলতা। পরকালে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়া হলো সবচেয়ে বড় সফলতা। আল্লাহ তায়ালার হাতেই রয়েছে এ সমস্ত কল্যাণ ও সফলতা। আল্লাহ তায়ালা এগুলো মানুষকে দান করেন। এজন্য আমরা তাঁর কাছেই প্রার্থনা জানাব। উপরিউক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে এ শিক্ষাই প্রদান করেছেন। দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত কল্যাণ লাভের জন্য এ দোয়াটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আয়াত ২

رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

অর্থ: "হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের প্রতি দয়া কর। যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে লালনপালন করেছেন।" (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৪)

মাতাপিতা সন্তানের অতি আপনজন। তাঁরা অত্যন্ত আদর-স্নেহে সন্তানকে লালনপালন করেন। নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ান। নিজেরা কষ্ট করে সন্তানকে আরাম-আয়েশে রাখেন। বিশেষ করে শৈশবকালে তাঁরা আমাদের খুব যত্নের সাথে প্রতিপালন করেন। শিশুকালে সকল মানুষই অসহায় থাকে। নিজে নিজে দাঁড়াতে পারে না, খেতে পারে না, চলাফেরা করতে পারে না। এমনকি কথাবার্তাও বলতে পারে না। মাতাপিতাই এ সময় মানুষের সবচেয়ে বড় অবলম্বন। তাঁরাই এ সময় সন্তানকে মায়া-মমতা দিয়ে বড় করে তোলেন। অতএব, আমাদের সকলের কর্তব্য মাতাপিতার আনুগত্য করা। তাঁদের কথা মেনে চলা। তাঁদের জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করা। এ আয়াতে মহান আল্লাহ মাতাপিতার জন্য দোয়া করার বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা এ আয়াত অর্থসহ শিখব। অতঃপর আন্তরিকভাবে এ আয়াত পড়ে মহান আল্লাহর নিকট আমাদের মাতাপিতার জন্য দোয়া করব। তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাঁদের কল্যাণ ও রহমত দান করবেন।

আয়াত ৩

رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا

অর্থ: “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ কর।" (সূরা তা-হা, আয়াত: ১১৪)
উক্ত আয়াতে জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য মুনাজাত করার কথা বলা হয়েছে। জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। কেননা শিক্ষা ও জ্ঞানের মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালাকে চিনতে পারি। তার বিধান ও বাণী জানতে পারি। জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে আমরা মানুষের মতো মানুষ হই। জীবনে উন্নতি লাভের জন্যও জ্ঞানার্জন করা জরুরি। সুতরাং আমরা ভালো করে লেখাপড়া শিখব। জ্ঞানার্জনে কোনোরূপ অবহেলা করব না। আর সাথে সাথে আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করে দেওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট মুনাজাত করব। কেননা মহান আল্লাহই সবকিছুর মালিক। তিনিই মানুষকে জ্ঞান দান করেন। অতএব, জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য তাঁর নিকটই প্রার্থনা করতে হবে।

কাজ: শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে দুই হাত তুলে মুনাজাতমূলক আয়াত তিনটি অর্থসহ মুখস্থ বলবে।
Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...